হযরত যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন দাঊদ ও সুলাইমান (আঃ) এর বংশধর। যাকারিয়া (আঃ) ছিলেন বনী ইসরাঈলের নবী ইয়াহইয়া (আঃ) এর পিতা। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা যাকারিয়া (আঃ)-কে সন্তান প্রদানের ঘটনা মানুষের নিকট বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ যখন যাকারিয়াকে পুত্ৰ সন্তান দান করেন তখন তিনি ছিলেন বৃদ্ধ। তাঁর স্ত্রী যৌবনকাল থেকেই ছিলেন বন্ধ্যা। আর এখন বার্ধক্যে আক্রান্ত। কিন্তু এসব প্রতিকূল অবস্থা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যাকারিয়া (আঃ) আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হননি।
তিনি নিরবে নিভৃতে তাঁর প্রতিপালককে এই বলে আহ্বান করেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, তোমাকে আহ্বান করে আমি কখনও ব্যৰ্থ হইনি। আমি আশংকা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে। আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর উত্তরাধিকারী। যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের। এবং হে আমার প্রতিপালক, তাকে করো সন্তোষভাজন।
হযরত যাকারিয়ার সন্তান কামনার পেছনে যে প্রেরণাটি কাজ করেছিল তা এই যে, তিনি হযরত মারইয়াম বিনতে ইমরানকে বায়তুল মুকাদ্দাসে দেখাশুনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের যে কক্ষে মারইয়াম (আঃ) থাকতেন, সে কক্ষে যাকারিয়া (আঃ) যখনই যেতেন, দেখতেন ভিন্ন মৌসুমের পর্যাপ্ত ফল মারইয়ামের পাশে মওজুদ রয়েছে। এটি ছিল আওলিয়াদের কারামতের একটি নিদর্শন। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ হে মারইয়াম, এসব তুমি কোথায় পেলে?
তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ এ আল্লাহর নিকট হতে, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন”। তখন হযরত যাকারিয়ার অন্তরে এ কথার উদয় হল যে, যে সত্তা মারইয়ামকে ভিন্ন মৌসুমের ফল দান করছেন, তিনি আমাকে এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তানও দান করতে পারেন। সেখানেই যাকারিয়া (আঃ) তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেনঃ “হে আমার পালনকর্তা, আপনার নিকট থেকে আমাকে পূত পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।
হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আ:) হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া(আলাইহিমাস সালাম)1.সন্তান লাভের জন্য যাকারিয়ার দো‘আ2.ইয়াহইয়ারবৈশিষ্ট্য1.ইয়াহ্ইয়া ও যাকারিয়ার মৃত্যুযাকারিয়া ও ইয়াহইয়া সুলায়মান পরবর্তী দুই নবী পরস্পরে পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতেরকাজ শুরু করেন। হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া (আঃ) সম্পর্কে ৪টি সূরার ২২টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সূরা আন‘আমে কেবল ১৮ জন নবীর নামের তালিকায় তাঁদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। বাকী অন্য সূরাগুলিতে খুবই সংক্ষেপে কেবল ইয়াহ্ইয়ার জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।যাকারিয়া (আঃ) সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণিতহয়েছে যে, তিনি মারিয়ামের লালন-পালনকারী ছিলেন।
এ বিষয়ে আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানেযা বলেন, তার সার-সংক্ষেপ এই যে, ইমরানের স্ত্রী মানত করেছিলেন যে, আমারগর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিলাম। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, তাঁর একটি পুত্র সন্তান হবে এবং তাকে তিনি আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োগ করবেন। কিন্তু পুত্রের স্থলে কন্যা সন্তান অর্থাৎ মারিয়াম জন্মগ্রহণ করলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ﻟَﻴْﺲَ ﺍﻟﺬَّﻛَﺮُ ﻛَﺎﻷُﻧْﺜَﻰ ‘এই কন্যার মত কোন পুত্রই নেই (আলে-ইমরান ৩/৩৬)।
এক্ষণে যেহেতু মানত অনুযায়ী তাকে মসজিদের খেদমতেউৎসর্গ করতে হবে। কিন্তু সেখানে তার অভিভাবক কে হবে? সম্ভবতঃ ঐসময় মারিয়ামের পিতা জীবিত ছিলেন না। বংশের লোকেরা সবাই এই পবিত্র মেয়েটির অভিভাবক হ’তে চায়। ফলে অবশেষে লটারীর ব্যবস্থা হয়। সেখানে মারিয়ামের খালু এবং তৎকালীন নবীহযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর নাম আসে। এ ঘটনাটিই আল্লাহপাক তাঁর শেষ নবীকে শুনাচ্ছেন নিম্নোক্ত ভাষায়- ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧﺒَﺎﺀ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ ﻧُﻮﺣِﻴﻪِ ﺇِﻟَﻴﻚَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳُﻠْﻘُﻮﻥ ﺃَﻗْﻼَﻣَﻬُﻢْ ﺃَﻳُّﻬُﻢْ ﻳَﻜْﻔُﻞُﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳَﺨْﺘَﺼِﻤُﻮﻥَ- ) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৪৪ (মারিয়ামের বিষয়টি) হলো গায়েবী সংবাদ,যা আমরা আপনাকে প্রত্যাদেশ করছি।
আপনি তো তাদেরকাছে ছিলেন না, যখন তারা লটারীর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করছিল এ ব্যাপারে যে, কে মারিয়ামকে প্রতিপালন করবে? আর আপনিতাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা এ বিষয়ে ঝগড়া করছিল’(আলে ইমরান ৩/৪৪)। অতঃপরআল্লাহ তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে অর্পণ করলেন (আলে ইমরান ৩/৩৭)।মারিয়াম মসজিদেরসংলগ্ন মেহরাবে থাকতেন। যাকারিয়া (আঃ) তাকে নিয়মিত দেখাশুনা করতেন। কিন্তু আশ্চর্যেরবিষয় ছিল এই যে, যখনই তিনি মেহরাবে আসতেন, তখনই সেখানে নতুন নতুন তাজা ফল-ফলাদিও খাদ্য-খাবার দেখতে পেতেন।
তিনি একদিন এ বিষয়ে মারিয়ামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ﻫُﻮَ ﻣِﻦْ ﻋِﻨﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ‘এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাবরিযিক দান করেন (আলে ইমরান ৩/৩৭)।সন্তান লাভের জন্য যাকারিয়ার দো‘আ: সম্ভবতঃ শিশু মারিয়ামের উপরোক্ত কথা থেকেই নিঃসন্তান বৃদ্ধ যাকারিয়ার মনের কোণে আশারসঞ্চার হয় এবং চিন্তা করেন যে, যিনি ফলের মৌসুম ছাড়াই মারিয়ামকে তাজা ফল সরবরাহ করেছেন, নিশ্চয়ই তিনি বৃদ্ধ দম্পতিকে সন্তান দান করবেন। অতঃপর তিনি বুকে সাহস বেঁধে আল্লাহর নিকটেপ্রার্থনা করেন।
যেমন আল্লাহ বলেন, ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﺩَﻋَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺭَﺑَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﻫَﺐْ ﻟِﻲْ ﻣِﻦ ﻟَّﺪُﻧْﻚَ ﺫُﺭِّﻳَّﺔًﻃَﻴِّﺒَﺔً ﺇِﻧَّﻚَ ﺳَﻤِﻴْﻊُ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ- ) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৩৮(-‘সেখানেই যাকারিয়া তার পালনকর্তার নিকটে প্রার্থনাকরল এবং বলল, হে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তানদান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’ (আলে ইমরান ৩/৩৮)। একথাটি অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত ভাবে- ﻛﻬﻴﻌﺺ- ﺫِﻛْﺮُ ﺭَﺣْﻤَﺔِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻋَﺒْﺪَﻩُ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ- ﺇِﺫْ ﻧَﺎﺩَﻯ ﺭَﺑَّﻪُ ﻧِﺪَﺍﺀ ﺧَﻔِﻴًّﺎ- ﻗَﺎﻝَﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻭَﻫَﻦَ ﺍﻟْﻌَﻈْﻢُ ﻣِﻨِّﻲ ﻭَﺍﺷْﺘَﻌَﻞَ ﺍﻟﺮَّﺃْﺱُ ﺷَﻴْﺒﺎً ﻭَﻟَﻢْ ﺃَﻛُﻦ ﺑِﺪُﻋَﺎﺋِﻚَ ﺭَﺏِّ ﺷَﻘِﻴًّﺎ – ﻭَﺇِﻧِّﻲ ﺧِﻔْﺖُ ﺍﻟْﻤَﻮَﺍﻟِﻲَ ﻣِﻦﻭَﺭَﺍﺋِﻲ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻲ ﻋَﺎﻗِﺮًﺍ ﻓَﻬَﺐْ ﻟِﻲ ﻣِﻨﻠَّﺪُﻧﻚَ ﻭَﻟِﻴًّﺎ- ﻳَﺮِﺛُﻨِﻲ ﻭَﻳَﺮِﺙُ ﻣِﻦْ ﺁﻝِ ﻳَﻌْﻘُﻮﺏَ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻪُ ﺭَﺏِّﺭَﺿِﻴًّﺎ – )ﻣﺮﻳﻢ ২-৬(-‘এটি আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ তার বান্দা যাকারিয়ার প্রতি’(মারিয়াম ২)।‘যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল নিভৃতে’। ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা!আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যের কারণে মস্তক শ্বেত-শুভ্র হয়েগেছে।
হে প্রভু! আপনাকে ডেকে আমি কখনো নিরাশ হইনি’। ‘আমি ভয় করি আমারপরবর্তী বংশধরের। অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব আপনি নিজের পক্ষ থেকেআমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’। ‘সে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং উত্তরাধিকারীহবে ইয়াকূব-বংশের এবং হে প্রভু! আপনি তাকে করুন সদা-সন্তুষ্ট’(মারিয়াম ১৯/২-৬)।
জবাবে আল্লাহ বললেন, ﻳَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺇِﻧَّﺎ ﻧُﺒَﺸِّﺮُﻙَ ﺑِﻐُﻼَﻡٍ ﺍﺳْﻤُﻪُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﻟَﻢْ ﻧَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻪُ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﺳَﻤِﻴًّﺎ- ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺃَﻧَّﻰﻳَﻜُﻮﻥُ ﻟِﻲ ﻏُﻼَﻡٌ ﻭَﻛَﺎﻧَﺖِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺗِﻲ ﻋَﺎﻗِﺮﺍً ﻭَﻗَﺪْ ﺑَﻠَﻐْﺖُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮِ ﻋِﺘِﻴًّﺎ – ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻫُﻮَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻫَﻴِّﻦٌﻭَﻗَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﺘُﻚَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻭَﻟَﻢْ ﺗَﻚُ ﺷَﻴْﺌًﺎ- ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﻟِﻲ ﺁﻳَﺔً ﻗَﺎﻝَ ﺁﻳَﺘُﻚَ ﺃَﻻَّ ﺗُﻜَﻠِّﻢَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺛَﻼَﺙَ ﻟَﻴَﺎﻝٍﺳَﻮِﻳًّﺎ- ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻣِﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤِﺤْﺮَﺍﺏِ ﻓَﺄَﻭْﺣَﻰ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﺃَﻥْ ﺳَﺒِّﺤُﻮﺍ ﺑُﻜْﺮَﺓً ﻭَّﻋَﺸِﻴًّﺎ – )ﻣﺮﻳﻢ ৭-১১(-‘হেযাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে এই নামে আমি কারু নামকরণ করিনি’।
‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! কেমন করে পুত্র সন্তানহবে? অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। আর আমিও বার্ধক্যের শেষপ্রান্তে উপনীত’। ‘তিনিবললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রভু বলে দিয়েছেন যে, এটা আমার জন্য খুবই সহজ।আমি তো ইতিপূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না’। ‘সে বলল, হেআমার পালনকর্তা! আমাকে একটি নিদর্শন প্রদান করুন। তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে,তুমি (সুস্থ অবস্থায়) একটানা তিন দিন লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলতে পারবে না’। ‘অতঃপরসে কক্ষ থেকে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে এল এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহকে স্মরণ করতে বলল’ (মারিয়াম ১৯/৭-১১)। ইয়াহইয়ার বৈশিষ্ট্য: আল্লাহ বলেন, ﻓَﻨَﺎﺩَﺗْﻪُ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺋِﻢٌ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤِﺤْﺮَﺍﺏِ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻳُﺒَﺸِّﺮُﻙَ ﺑِﻴَﺤْﻴَـﻰ ﻣُﺼَﺪِّﻗﺎً ﺑِﻜَﻠِﻤَﺔٍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻠﻪِﻭَﺳَﻴِّﺪﺍً ﻭَﺣَﺼُﻮْﺭﺍً ﻭَﻧَﺒِﻴًّﺎ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺤِﻴْﻦَ- ) ﺁﻝ ﻋﻤﺮﺍﻥ ৩৯(-‘অতঃপর যখন সে কামরায় ছালাতরত অবস্থায়দাঁড়িয়েছিল, তখন ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল, যে, আল্লাহ আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে। (১) যিনি সাক্ষ্য দিবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে। (২) যিনি নেতা হবেন এবং (৩) যিনি নারীসঙ্গ মুক্ত হবেন ও (৪) সৎকর্মশীল নবী হবেন’(আলেইমরান ৩/৩৯)।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশ মতে যাকারিয়া তিনদিন যাবৎ লোকদের সাথে কথা বন্ধরাখলেন ইশারা-ইঙ্গিত ব্যতীত এবং সকালে সন্ধ্যায় আল্লাহর ইবাদতে রত থাকলেন ও তাঁরপবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে লাগলেন(আলে ইমরান ৩/৪০-৪১)। যাকারিয়ার প্রার্থনা অন্যত্রএভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, ﻭَﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺇِﺫْ ﻧَﺎﺩَﻯ ﺭَﺑَّﻪُ ﺭَﺏِّ ﻻَ ﺗَﺬَﺭْﻧِﻲ ﻓَﺮْﺩﺍً ﻭَﺃَﻧﺖَ ﺧَﻴْﺮُ ﺍﻟْﻮَﺍﺭِﺛِﻴﻦَ -ﻓَﺎﺳْﺘَﺠَﺒْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﻭَﻭَﻫَﺒْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﻭَﺃَﺻْﻠَﺤْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﺯَﻭْﺟَﻪُ ﺇِﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﻳُﺴَﺎﺭِﻋُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَﺍﺕِ ﻭَﻳَﺪْﻋُﻮﻧَﻨَﺎﺭَﻏَﺒﺎًﻭَّﺭَﻫَﺒﺎً
অতঃপর ইয়াহইয়াসম্পর্কে আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ﻳَﺎ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺧُﺬِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﻘُﻮَّﺓٍ ﻭَﺁﺗَﻴْﻨَﺎﻩُ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢَ ﺻَﺒِﻴًّﺎ – ﻭَﺣَﻨَﺎﻧًﺎ ﻣِّﻦﻟَّﺪُﻧَّﺎ ﻭَﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺗَﻘِﻴًّﺎ- ﻭَﺑَﺮّﺍ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﺟَﺒَّﺎﺭﺍً ﻋَﺼِﻴًّﺎ- ﻭَﺳَﻼَﻡٌ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﻭُﻟِﺪَ ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻤُﻮْﺕُ ﻭَﻳَﻮْﻡَﻳُﺒْﻌَﺚُ ﺣَﻴًّﺎ – )ﻣﺮﻳﻢ ১২-১৫(-‘হে ইয়াহ্ইয়া! দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ (তাওরাত) ধারণ কর। আর আমরাতাকে (৫) শৈশবেই প্রজ্ঞা দান করেছিলাম’(মারিয়াম ১২)। ‘এবং নিজের পক্ষ থেকে তাকে (৬)বিশেষভাবে দান করেছিলাম কোমলতা ও (৭) পবিত্রতা এবং সে ছিল (৮) অতীবতাক্বওয়াশীল’ (১৩)। ‘সে ছিল (৯) পিতা-মাতার অনুগত এবং (১০) সে উদ্ধত ও অবাধ্য ছিল না’(১৪)।‘তার উপরে শান্তি, যেদিন সে জন্মগ্রহণ করেছে, যেদিন সে মৃত্যুবরণ করেছে এবংযেদিন সে জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে’(মারিয়াম ১৯/১২-১৫)।উপরে বর্ণিত আলে-ইমরান ৩৯ও মারিয়াম ১২-১৫ আয়াতে ইয়াহইয়া (আঃ)-কে প্রদত্ত মোট ১০ টি বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয়।উপরোক্ত বর্ণনা সমূহ থেকে যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রতিভাতহয়। যেমন-(১) যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া বায়তুল মুক্বাদ্দাসের সন্নিকটে বসবাস করেন এবং তাঁরা বনুইস্রাঈল বংশের নবী ছিলেন। (২) যাকারিয়া (আঃ) বিবি মারিয়ামের অভিভাবক ও লালন-পালনকারীছিলেন। (৩) যাকারিয়া অতি বৃদ্ধ বয়সে বন্ধ্যা স্ত্রীর গর্ভ হ’তে একমাত্র পুত্র সন্তান লাভ করেন এবং আল্লাহ স্বয়ং তার নাম রাখেন ইয়াহইয়া, যে নাম ইতিপূর্বে কারু জন্য রাখা হয়নি। (৪)ইয়াহইয়া নবী হন। তিনি শৈশব থেকেই প্রজ্ঞাসম্পন্ন, কোমল হৃদয় ও পবিত্র ব্যক্তিত্বছিলেন। তিনি চিরকুমার ছিলেন। তিনি পিতা-মাতার অতীব অনুগত এবং আল্লাহভীরু ছিলেন। (৫) মারিয়াম ছিলেন ইয়াহইয়ার খালাতো বোন এবং ইয়াহইয়ার পরেই মারিয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) নবী এবংরাসূল হন। তারপর থেকে শেষ নবীর আবির্ভাব পর্যন্ত প্রায় ছয়শো বছর নবী আগমনের সিলসিলা বন্ধ থাকে। যাকে ﻓﺘﺮﺓ ﺍﻟﺮﺳﻞ বা ‘রাসূল আগমনের বিরতিকাল’ বলা হয়।(৬) যাকারিয়া (আঃ)-এরশরী‘আতে ছিয়াম অবস্থায় সর্বদা মৌন থাকা এবং ইশারা-ইঙ্গিত ব্যতীত কারু সাথে কথা না বলারবিধান ছিল।
ইসলামী শরী‘আতে এটা রহিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ﻻﻳُﺘْﻢَ ﺑﻌﺪ ﺍﺣﺘﻼﻡٍ ﻭﻻﺻُﻤَﺎﺕَ ﻳﻮﻡٍ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻠﻴﻞ ‘অর্থাৎ সন্তান বালেগ হওয়ার পরে পিতৃহারা হ’লে তাকে ইয়াতীম বলাযাবে না এবং রাত্রি পর্যন্ত সারা দিন মৌনতা অবলম্বন করা কোন ইবাদত নয়’।
উল্লেখ্য যে,ইহুদীদের চরিত্র পরে এতই কলুষিত ও উদ্ধত হয় যে, তারা যাকারিয়া ও ইয়াহইয়ার ন্যায়মহানপয়গম্বরগণকে হত্যা করে এবংহযরত ঈসাকেও হত্যা করতে উদ্যত হয়। কিন্তু আল্লাহ তাকে জীবিত আসমানে উঠিয়ে নেন। ইয়াহ্ইয়া ও যাকারিয়ার মৃত্যু: যাকারিয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল, নাতাকে হত্যা করা হয়েছিল, এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। জনৈকা নষ্টা মহিলার প্ররোচনায় শামদেশের বাদশাহ নবী ইয়াহইয়াকেহত্যা করলে ঐ রাতেই বাদশাহ সপরিবারে নিজ প্রাসাদসহভূমিধ্বসের গযবে ধ্বংস হয়ে যান।এতে লোকেরা হযরত যাকারিয়াকেই দায়ী করে ও তাকে হত্যা করার জন্য ধাওয়া করে। তখন একটি গাছ ফাঁক হয়ে তাঁকে আশ্রয় দেয়। পরেশয়তানের প্ররোচনায় লোকেরা ঐ গাছটি করাতে চিরে দু’ভাগ করে ফেলে এবং এভাবেই যাকারিয়া নিহত হন বলে যাকারিয়া (আঃ) নিজেই মে‘রাজ রজনীতে শেষনবী (ছাঃ)-এর সাথে বর্ণনা করেছেন বলে ইবনু আববাস-এর নামে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, সে সম্পর্কে হাফেয ইবনু কাছীর বলেন, ﻫﺬﺍ ﺳﻴﺎﻕ ﻏﺮﻳﺐ ﺟﺪﺍ ﻭﺣﺪﻳﺚ ﻋﺠﻴﺐ ﻭﺭﻓﻌﻪ ﻣﻨﻜﺮ -‘এটি বিস্ময়করভাবে পূর্বাপর সম্পর্কহীন ও আশ্চর্যজনক হাদীছ এবং এটি রাসূল থেকে বর্ণিত হওয়াটা একেবারেই অমূলক।
ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ বলেন, গাছের ফাটলে আশ্রয় গ্রহণকারীব্যক্তি ছিলেন শা‘ইয়া ( ﺷﻌﻴﺎ)। আর যাকারিয়া স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন। মানছূরপুরীবাইবেলের বর্ণনার আলোকে বলেন, ইয়াহ্ইয়াকেপ্রথমে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু বাদশাহর প্রেমিকা ঐ নষ্টা মহিলা তার মাথা দাবী করায় জেলখানায় তাকে হত্যা করে তারছিন্ন মস্তক ও রক্ত এনে ঐ মহিলাকে উপহার দেওয়া হয়। অতএব উক্ত দুই নবীর মৃত্যুরসঠিক ঘটনার বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।