খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী পরিচিতি ও ইতিহাস পাঠে জানা যায়, যে সকল মহান ব্যক্তির অক্লান্ত কর্ম প্রচেষ্টার ফলে বঙ্গ-ভারতে সােনালী ইসলামের নির্মল আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ সম্ভব হয়েছে, তাদের মধ্যে রূহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা সূফী কুলের শিরােমণি মর্দে মুজাহিদ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়।
একথা বাস্তাব সত্য যে তিনিই সাধক কুলের সম্রাট সুফীবৃন্দের গৌরব, তাপসগণের শিরমণি ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রনায়ক হযরত মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহতার বিচিত্র জীবন কাহিনী ধ্যানােপাসনার জন্য প্রেরণাদানকারী হিসাবে আমাদের নিকট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইতিহাসের পাতা খুললে আমরা দেখতে পাই ইসলামের জন্য তার আত্মত্যাগ তাকে ইতিহাসের সােনালী পাতায় অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। সত্যি কথা বলতে কি তার জীবন কাহিনী বহু কর্তি ও সাধনা সমৃদ্ধ ছিল। আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ সােনালী ইসলামের নির্মল আদর্শ প্রচারে বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখিন হয়ে শেষ পর্যন্ত সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরােহণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
ঐতিহাসিকগণ বলেন, বঙ্গ-ভারতের ইসলাম প্রচারেখাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) যে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন, তাহা ইতিহাসের পাতায় চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। তাকে কেন্দ্র করে অনেক উপাখ্যান রচিত হয়েছে। পরিশেষে আমরা এইরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে সত্যের সৈনিক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এমন একজন আদর্শ স্থানীয় মানুষ ছিলেন যে পার্থিব ভােগ বিলাসিতা দূরের কথা কৃচ্ছ সাধনায়ই কেটে ছিল তা সারাজীবন। ইতিহাসবেত্তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায়, আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ-এর হাতে অসংখ্য মুসলমান ও অমুসলমান বাইয়াত গ্রহণ করে নিজেদের জীবন ধন্য করেছেন। ( মারেফত কি এবং মারেফত কাকে বলে )
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
জন্ম ও বংশ পরিচয় :-
রূহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী সাহেবের জন্ম হয় সিস্তানের গনজর পল্লীতে। ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায়, তার পিতা খাজা গিয়াসুদ্দীন ছিলেন একাধারে খােদাভক্ত আবেদ এবং বিত্তশালী ব্যক্তি। তিনি সর্বদা কুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে চেষ্টা করতেন। সুতরাং খাজা সাহেব বাল্যকালে অত্যন্ত যত্ন ও স্নেহের সাথে প্রতিপালিত হয়ে ছিলেন। হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সানজারী রহমাতুল্লাহ পবিত্র আরবের সুবিখ্যাত কুরাইশ বংশদ্ভূত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুর নিম্নতর বংশধর ছিলেন। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তিনি মাতৃ বংশসূত্র ও পিতৃ বংশসূত্র উভয় দিক দিয়াই সত্যের সৈনিক শেরে খােদার সহিত ওঁতপােতভাবে জড়িত ছিলেন। সত্যের সেনানী হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমাতুল্লাহ এর জন্ম সাল ও তারিখ সম্বন্ধেও সুসাহিত্যিক লেখকদের মধ্যে বেশ মত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )
১। সিয়ারুল আকতারের লেখকের মতে সত্যের অগ্রনায়ক হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহ এর জন্মসাল হল ৫৩৭ হিজরী। তিনি বহু চিন্তা ভাবনা যুক্তি তর্ক ও বিস্তারিত আলােচনার পর তার জন্ম দিন হিসাবে ৫৩৭ হিজরী সালের ১৪ই রজব সােমবারকে মনােনয়ন করেছেন এবং তিনি, এ কথা বলেছেন যে সুফীকুলের শিরমণি ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রনায়ক খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ উক্ত তারিখেই ধরাধামে আগমন করেছেন।
২। অন্যদিকে খাজা সাহেবের রহমাতুল্লাহ সাল ও তারিখ সম্বন্ধে প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সজিনাতুন আসফিয়ার-এর লেখক উল্লেখ করেছেন যে, আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) হিজরী ৫৩০ সনের ১৪ই রজব সােমবার বােহে সাদিকের সময় এ ধরাধামে আগমন করেছেন। উক্ত আলােচনা হতে অনুধাবন করা যেতে পারে যে, উভয় লেখকই দুইটি বিষয়ে একমত এবং একটি বিষয়ে ভিন্নমত পােষণ করতেছেন। যে বিষয়দ্বয়ে তারা একমত প্রকাশ করেছেন তাহা হল ১৪ই রজব এবং সােমবার। কিন্তু সনের ক্ষেত্রে উভয় এমন মত পােষণ করেছেন যে এখন দুই মতের মধ্যে সাত বছরের ব্যবধান রয়েছে। তবে খাজা গরীব নেওয়াজ রহমাতুল্লাহ যে কোন সালেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী ব্যান্ডকে সমুন্নত করবার জন্য তিন যে অবদান রেখে গেছেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
ইতিহাস পাঠে জানা যায়, সৈয়দা উমমুল ওয়ারা গর্ভাবস্থায় অনেক নেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এমনও দেখা গেছে বহু সময় তিনি নিজের স্বপ্নের কথা সলজ্জভাবে স্বামী হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন রহমাতুল্লাহ এর নিকট ব্যক্ত করতেন। পূন্যবান ও বিচক্ষণ স্বামী তাকে নানাভাবে প্রবােধ দান করতেন এবং মনে মনে ভাৰী সুসন্তানের চন্দ্র মুখ দেখবার প্রত্যাশায় উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন। | সত্যি কথা বলতে হয়, একদিন তাদের বাসগৃহে উজ্জ্বল করে রূহানী জগতের খাটি প্রদাতা সত্যের দিশারী খাজা গরীব নেওয়াজ রহমাতুল্লাহ ধরাধামে পদার্পন করেন। তার আগমনে সারা পরিবারে আনন্দের ফোয়ারা ছুটলো। ইতিহাস বেত্তারা বলেন, তার আগমনের তিন কিংবা সাত দিন পর, নবজাত শিশুর নাম রাখা হয় মঈনুদ্দীন কিন্তু বিবি উম্মু ওয়ার ও খাজা গিয়াসুদ্দীন রহমাতুল্লাহ তাকে হাসান নামেই ডাকতেন। যার কারণে ইতিহাস বেত্তারা এ জীবনীকার হাসান-শব্দটিকে তার আসল নামের সহিত সংযুক্ত করে তার নামকে মঈনুদ্দীন হাসান বলে উল্লেখ করেন।
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
বাল্য জীবনঃ
ইসলামের দিশারী সুফীসুধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর বয়স যখন সাত বৎসরে উপনিত হয়েছে, তখন হতেই তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। শুধু নামাজ আদায় করে ক্ষ্যান্ত হতেন না। এই বাচ্চা বয়সে তিনি নিয়মিত রােজা রাখতেন ও জিকিরের মজলিসে যােগ দিতেন। যদি কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কথা তার কানে আসত, শুনিমাত্রই তিনি বাধাবিপত্তি পেরিয়ে মজলিসে অংশগ্রহণ করতেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ একটু চিন্তা করলেই অনুধাবন করতে পারবেন যে, খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ বাল্যকালে কতদূর খােদাভীতি অর্জন করেছিলেন, যাহা নিম্নের ঘটনার দ্বারাই প্রতিফলিত হবে।
একদা তিনি স্বীয় পিতার সাথে ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন, এহেন সময় পথিমধ্যে এক অন্ধ ও অসহায় বালককে ময়লা ও ছেড়া কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়তে দেখলেন। সত্যি, খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ, উহা দেখিবামাত্রই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ইহাতে তার হৃদয়ের মনিকোঠায় এক অজানা ব্যথার উদয় হল। তিনি এ বালকের অবস্থা দেখতে দাঁড়ায়ে বহুক্ষণ চিন্তা করলেন। ইতিহাস বেত্তারা বলেন, তাপৰ পিতার অনুমতি ও নির্দেশের অপেক্ষা না করে নিজের পরিধেয় নতুন বস্ত্র খুলিয়া অন্ধ বালকটিকে পরিধান করালেন এবং হরষিত চিত্তে মহান করুণার আধার আল্লাহ জাল্লা শানুর শুকুরিয়া আদায় করলেন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ঈদের নামাজ আদায় করে মনের হয়ে নিজ গৃহে প্রতীত্যন করলেন। হানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনউদ্দি চিশতী রহমাতুল্লাহ এর সমুদয় কার্য কলাপই হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন (রাঃ) অদূরে থেকে নিরীক্ষণ করলেন, এবং মনে মনে বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের শুকর গুজারী করলেন।
উপসংহারে একথা বলা যেতে পারে যে, সূফী সাধক আলেম কুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহ ইসলামের ইতিহাসের তথা ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্কর হয়ে থাকবেন, তা তার বাল্যকালের প্রতিভা, চালচলন থেকেই প্রকাশ পেয়েছিল। ইতিহাস পাঠে জানা যায় যে, হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহ ছিলেন দুনিয়ার গছে আজম, কুতুবুল আক্তার এবং সমগ্র জিল ও ইনসানগণের পথ প্রদর্শক। তিনি যে বেলায়েতী গগনের দীপ্তিমান সূর্যস্বরূপ হবেন তা তার বাল্যকালেয় প্রতিচ্ছৰি থেকেই অনুধবন করা যেত। ইসলামের ইতহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তিনি মাতৃ গর্ভ হতে তিনি অলীরূপে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। ( জালাল উদ্দিন রুমি (রহঃ) এর জীবনী )
একথা বাস্তব সত্য যে শিশুকাল হতেই তিনি অকল্পনীয় কারামত এবং ঐশী, ক্ষমাসমূহের অধিকারী ছিলেন। একথাও শুনা যায় কেবলমাত্র যখন সাত বৎসর বয়সে উপনিত হয়েছিলেন এ সময় তিনি অর্থসহ ঐশীগ্রন্থ আল কোরান হেফজ করেন। অল্প দিনের মধ্যে তিনি ইলমে হাদীস ও ইলমে ফেকাতত পান্ডিত্ব অর্জন করেন। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ শুনলে অবাৰ হবেন সত্যের অগ্রনায়ক খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী রহমাতুল্লাহ মাত্র পনের বছর বয়সে এলমে তাছাউফ তত্ব সম্পর্কিত একখানা মূল্যবান গ্রন্থ তক্ত প্রণীত হয়েছিল। বাল্যকালের এসব নিদর্শন থেকেই প্রমাণ করেছিল যে তিনি ইসলামের একজন অলী হবেন।কাদিরীয়া, নকশবন্দীয়া মুজাদ্দেদীয়া। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে জানা যায় চিশতী হিন্দুস্থানের একটি গ্রামের নাম । সাধক ‘কুলের শিরমণি সত্যের সৈনিক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ ও তরীকার অধিকাংশ তাপসগণ এই গ্রামে অবস্থান করতেন বলে তার নামানুসারে তাদের প্রবর্তিত তৈরিকার নাম চিশতীয়া তরীকা হয়েছে। ইতিহাস, বেত্তারা বলেন, চিশতিয়া তরিকা যদিও খাজা সাহেবের আগেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই তরীকার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করে তারই সময় হতে। এই তরিকার অজিফা ও আমল অত্যন্ত সহজ ও সরল হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ অতি সহজে এই তরীকার চর্চা ও অনুসরণ করতে সক্ষম হয়।
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
খাজা বাবার কতিপয় বিশেষ উপদেশাবলীঃ
বিভিন্ন সময়ে সূফী সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ নিজ শিষ্যবর্গকে যে সব মূল্যবান নসীহত প্রদান করেছেন তার তুলনা হয় না। নিম্নে তার কতিপয় নসীহত দেওয়া হলঃ
১। এলেম গভীর সাগর সাদৃশ্য, মারেফত উহার তরঙ্গ।
২। দান করলেই খােদায়ী নেয়ামত লাভ করা সম্ভব।
৩। আরেফের(কামেল লোকের) নিদর্শন এই যে, তিনি মৃত্যুকে বন্ধু মনে করেন এবং প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে তিনি খােদাকে স্মরণ করেন।’
৪। মুহাব্বতের নিদর্শন এই যে, বান্দা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করবে এবং সাথে সাথে তার এ ভয়ও থাকবে যেন তার নৈকট্য হতে সে বঞ্চিত না হয়।
৫। পিতামাতার দিকে ভক্তিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানও এবাদত।
৬। হতভাগা সেই লােক, যে নিজেকে গুণাহর কাজে লিপ্ত করে।
৭। পরিশ্রম ব্যতীত কোন কিছুই লাভ করা সম্ভব নয়।
৮। চার শ্রেণীর লােক খুবই ভালঃ ১মঃ যে দরবেশ সর্বদা নিজেকে ধনী মনে করে। অর্থাৎ সম্বলহীন হওয়া সত্ত্বেও যে নিজের দারিদ্র কখনও প্রকাশ করে না। ২য়ঃ যে ক্ষুধার্ত নিজেকে তৃপ্ত ভাবে, ৩য়ঃ যে চিন্তাক্লিষ্ট বিপন্ন সর্বদা হাসিমুখে থাকে, ৪র্থঃ যে লােক শত্রুর সহিত বন্ধু সুলভ আচরণ করে।
৯। সর্ব প্রথম যে বিষয়টি মানুষের উপর ফরয করা হয়েছে, তা হল আল্লাহর মারেফত।
১০। তাওবার শুরু কয়েকটি-জাহেলের সংসর্গ পরিত্যাগ করা, ভ্রান্তিদের থেকে দূরে থাকা, অবিশ্বাসীদের সান্নিধ্য পরিহার করা, খােদার প্রিয় বান্দাদের সােহবত অবলম্বন করা ও নেক কাজে মনােনিবেশ করা ।
১১। নেক করার চাইতে নেককারের সােহবত যত উত্তম, পাপ করার চাইতে পাপীর সােহবত তত খারাপ।
১২। কোরআন শরীফ, কাবাগৃহ, পিতামাতা, আলেম ও ওস্তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা এবাদতের শামিল।
১৩। আরেফ(কামেল লোক) যখন নীরব থাকেন,তখন তুমি মনে করবে তিনি প্রভুর সাথে কথা বলতেছেন।
১৫। ঐ ব্যক্তি প্রকৃত দরবেশ যার কাছে এসে কোন লােক খালি হাতে ফেরত যায়না।
১৬। ভালবাসার প্রকৃত দাবীদার ঐ সকল লােক, যারা সর্বদা বন্ধুর কথা শুনতে ভালোবাসে।
১৭। সত্যিকার বন্ধু ঐ ব্যক্তি, যে বন্ধুর দেওয়া বিপদকে হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করে।
১৮। একজন মুসলিম ভাইকে বেইজ্জতি বা অপদস্থ করলে যত ক্ষতি হয় সারাজীবন গুনার কাজে লিপ্ত থাকলেও তত ক্ষতি হয় না। |
১৯। যে সকল কথা বা কাজ আল্লাহ পাক অপছন্দ করেন, বান্দাও যদি সেই সকল কাজ ও কথা ঘৃণা করতে শিখে, তবেই তার দােস্তী সে অনায়াসে লাভ করতে পারে।
২০। ক্ষুধার্তকে অন্নদান, অভাগ্রস্তের অভাবপূরণ ও শত্রুর সাথে সদাচরণ, চরিত্রের বিশেষ গুণ।
২১। ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত প্রেমিক যার ইহলােক ও পরলােকের সকল আশা ত্যাগ করে একমাত্র মহান মাহবুব আল্লাহ তায়ালার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।
২২। কোন লােক ততক্ষণ আরেফ(কামেল) হতে পারে না, যতক্ষণ না সে নিজ অস্তিত্ব একেবারে ভুলে না যায়।
২৩। প্রেমের পথে যে অটল থাকে, প্রেমাগ্নি তার অস্তিত্বকে বিলোপ করে দেয়।
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহঃ) জীবনী
ইন্তেকাল ও দাফনঃ
একথা সর্বজন বিদিত যে মানুষ মরণশীল। জন্মিলে মরতে হয়। এ নীতির উপর ভিত্তি করে বিশ্ব নিয়ন্তা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের প্রিয় হাবীব নিখিল বিশ্বের ত্রাণকর্তা সুপারিশের কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মত নবীও মৃত্যুর শীতল স্পর্শ হতে পরিত্রাণ পাননি। অতপর রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাপাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহ ও একদিন চীর বিদায়ের ইঙ্গিত প্রাপ্ত হলেন তার মহা প্রস্থানের সময় ঘনাইয়া আসল। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, তার মৃত্যু সম্বন্ধে কথিত আছে যে আলেমকুলের শিরমণি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী যে রাত্রে ইহধাম ত্যাগ করেছিলেন, সেই রাত্রিতে বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহ রাব্দুল আলামীনের অসংখ্যক অলীআল্লাহ থাকে দেখতে পান যে সাইয়্যেদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলতেছেন মঈনুদ্দীন আল্লাহ পাকের বন্ধু । আমরা তাকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করবার জন্য আগমন করছি ।
ইতিহাস বেত্তরা বলেন, হিজরী ৬২৭ সালের ৬ই রজব তারিখে ইশার নামাজ আদায় করবার পর সুফী সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রাহঃ) নিজ কক্ষে ঢুকলেন এবং ভিতর হতে উক্ত কামরা বন্ধ করে দিলেন, ক্রমে ফজরের সময় হল। অতীব দুঃখের বিষয় হল প্রতিদিনের মত আর হুজুরার দরজা খুলল না। খাদেমগণ অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। পরিশেষে দরজা ভেঙ্গে দেখা গেল যে সূফী সাধক রুহানী জগতের খাটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী সাহেবের প্রাণ বায়ু শেষ হয়ে গেছে। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। খাজা সাহেবের ইহধাম ত্যাগের সংবাদ শুনে জনসাধারণ অত্যন্ত মর্মাহত হয়। দেশ বিদেশ হতে মানুষের ঢল নেমে আসল। তার জানাযার নামাজে অসংখ্য লােক শরীক হন। তার সুযােগ্য পুত্র খাজা ফখরুদ্দীন রহমতুল্লাহ জানাযার নামাজ পড়ান। তিনি যে হুজরায় মৃত্যু বরণ করেন সেই দুজরাতেই তাকে দাফন করা হয়।