হযরত মুহাম্মাদ সাঃ এর জীবনী | মহানবী মুহাম্মাদ সাঃ এর জীবনী কাহিনী | মহানবী সাঃ এর জীবনী | Hazrat Muhammad (sm.) jiboni & Life History

 মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবনাদর্শ বা জীবনী

আরবের অবস্থাঃ-  

মহানবী সাঃ এর জন্মের সময় আরবের লোকেরা নানা পাপের কাজে লিপ্ত ছিল। মারামারি, কাটাকাটি, ঝগড়া-বিবাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, লুণ্ঠন, মদ-জুয়া ইত্যাদি নিয়েই তারা মেতেছিল। এক আল্লাহকে ভুলে তারা নানা দেব-দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজা করত। পবিত্র কাবা তারা মূর্তিতে ভরে রেখেছিল। কাবা প্রাঙ্গণে তারা ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করেছিল। তখন বাজারে পণ্যের মত মানুষ বেচা কেনা হতো। মনিবরা দাস- দাসীদের প্রতি অমানবিক নির্যাতন করতো। পরিবারে ও সমাজে নারীদের কোন মান সম্মান বা অধিকার ছিলনা। সে সময় কন্যা শিশু জন্ম গ্রহণ করা পিতামাতার জন্য খুবই অপমানের বিষয় ছিল। মেয়ে শিশুদের নিষ্ঠুর ভাবে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে রাখা হতো। তাদের আচার-আচরণ ছিল বর্বর ও মানবতাবিরোধী। এই সময় মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিলনা। মদপান, জুয়াখেলা, সুদ, ব্যভিচার ছিল তখনকার লোকদের নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। কুসংস্কার ও পাপ পঙ্কিলতা অতল তলে নিমজ্জিত ছিল তারা। এ সময়কে বলা হয় আইয়ামে জাহিলিয়া বা মূর্খতা যুগ। মানবতার চরম দুর্দিনে আল্লাহতায়ালা তাঁর বন্ধু সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে পাঠালেন বিশ্ব মানবতার শান্তি দূত হিসেবে। মানুষকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য।
মহানবী সাঃ এর জন্ম ও পরিচয়
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২০ এপ্রিল এবং রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মায়ের নাম আমিনা। তার দাদার নাম ছিল আবদুল মুত্তালিব। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় মোহাম্মদ এবং আহমদ। তাঁর জন্মের পূর্বে পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান।
মহানবী সাঃ এর শৈশব ও কৈশোর
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মের পর চাচা আবু তালিবের দাসী সোয়েবা তাঁকে মাতৃস্নেহে লালন পালন করেন। তারপর তখনকার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের প্রথা অনুসারে বানু সাদ গোত্রের বেদুঈন মহিলা হালিমার হাতে তার লালন-পালনের ভার দেওয়া হয়। সোয়েবা যদিও তাকে অল্পদিন লালন-পালন করেছেন, তবুও তিনি প্রথম দুধমাতা ও তার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন। অনেকদিন পরেও তাদের খোঁজখবর নিয়েছেন এবং উপহার-উপঢৌকন দিয়েছেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত বিবি হালিমা নিজের সন্তানের মত শিশু মুহাম্মদ সাঃ কে লালন-পালন করেন। এসময় শিশু মুহাম্মদ সাঃ এর চরিত্রে ইনসাফ ও ত্যাগের একটি অনুপম দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে। তিনি হালিমার একটি স্তন থেকে দুধ পান করতেন। অন্যটি দুধ ভাই আব্দুল্লাহর জন্য রেখে দিতেন। তিনি বেদুইন পরিবার থেকে বিশুদ্ধ আরবী ভাষা শিখেন ও মরুভূমির মুক্ত পরিবেশে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন। পাঁচ বছর বয়সে তিনি মা আমিনার কোলে ফিরে আসেন। আদর সোহাগে মা তাকে লালন পালন করতে থাকে।ন কিন্তু মায়ের আদর তার কপালে বেশি দিন স্থায়ী হল না। তার ছয় বছর বয়সে মাও ইন্তেকাল করেন। এবার তিনি পিতা-মাতা দু'জনকেই হারিয়ে এতিম হয়ে যান। এরপর তিনি দাদা আবদুল মুত্তালিবের আদর-স্নেহে লালিত-পালিত হতে থাকেন। কিন্তু আট বছর বয়সের সময় তার দাদাও মারা যান। এরপর তিনি চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। আবু তালিবের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। কিশোর মোহাম্মদ সাঃ ছিলেন কর্মঠ। আকারও গলগ্রহ হয়ে থাকা তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি চাচার অস্বচ্ছল পরিবারের নানাভাবে সাহায্য করতেন। বাড়তি আয়ের জন্য রাখালদের সাথে ছাগল, মেষ চরাতেন। রাখাল বালকের জন্য তিনি ছিলেন আদর্শ। তাদের সাথে তিনি সৌহার্দ্য সম্প্রীতি বজায় রাখতেন। রাখালদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হলে তিনি বিচারকের ভূমিকা পালন করতেন। তিনি চাচার ব্যবসা-বাণিজ্যেও সাহায্য করতেন। একবার চাচার সাথে ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন। এসময় বহিরা নামক এক পাদ্রীর সাথে তার দেখা হয়। বহিরা তাঁকে অসাধারণ বালক বলে মন্তব্য করেন এবং শেষ নবী বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি আবু তালেবকে তার ব্যাপারে সাবধান করেন। কারণ শত্রুরা তার অনিষ্ট করতে পারে।
সিরিয়া থেকে ফেরার পর বালক মোহাম্মদ সাঃ ফিজার যুদ্ধ বিভীষিকা প্রত্যক্ষ করে আঁতকে ওঠেন। ওকাজ মেলায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এ যুদ্ধ হয়েছিল। কায়েস গোত্র অন্যায়ভাবে এই যুদ্ধ কুরাইশদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। এজন্য একে হারবুল ফিজার বা অন্যায় সমর বলা হয়। এ যুদ্ধ চলে একটানা ৫ বছর। অনেক মানুষ আহত, নিহত হলো। যুদ্ধের বিভীষিকাময় করুণ দৃশ্য দেখে, আহতদের করুন আর্তনাদে তার কোমল হৃদয় কেঁপে উঠল। তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন।

তিনি শান্তিকামী উৎসাহী যুবক বন্ধুদের নিয়ে "হিলফুল ফুজুল" নামে একটি সংগঠন করেন। এ সংঘের উদ্দেশ্য ছিল আর্তের সেবা করা, অত্যাচারীকে প্রতিরোধ করা, অত্যাচারীতকে সাহায্য করা, শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং গোত্রে গোত্রে সম্প্রীতি বজায় রাখা ইত্যাদি। তিনি তার প্রচেষ্টায় অনেক সফলতা লাভ করেন। সেদিনকার শান্তি সংঘের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আজও আমাদের কিশোর ও যুব সমাজ নিজেদের এ ধরনের মহৎ কাজে নিয়োজিত করতে পারে।

ইতিমধ্যেই সত্যবাদী বিচক্ষণ, আমানতদারিতা, পরোপকারী, শান্তিকামী যুবক হিসেবে মুহাম্মদ সাঃ এর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আপন পর সকলেই তাকে "আস সাদিক" বা সত্যবাদী, আল-আলামিন মানে বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করল। তার কাছে ধন-সম্পদ আমানত রাখতে লাগলো।
হাজরে আসওয়াদ স্থাপন
বহুদিন পূর্বের নির্মিত পুরাতন কাবাঘর সংস্কারের কাজ হাতে নিল কুরাইশরা। যথারীতি কাবা ঘর সংস্কার করল তারা কিন্তু পবিত্র হাযরে আসওয়াদ বা কালো পাথর স্থাপন নিয়ে বিবাদ লেগে গেল। প্রত্যেক গোত্রেই এ পাথর কাবা ঘরের দেয়ালে স্থাপনের সম্মান নিতে চাইল। যুদ্ধের সাজ সাজ রব পড়ে গেল। অবশেষে প্রবীণতম গোত্র প্রধান উমাইয়া বিন মুগীরার প্রস্তাব অনুসারে সিদ্ধান্ত হলো, আগামীকাল যে ব্যক্তি সবার আগে কাবাঘর আসবেন তার উপরে বিবাদ মীমাংসা অর্পিত হবে। তার সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা ঘরে সবার আগে প্রবেশ করেন। সবাই আনন্দে চিৎকার করে বললো, আলামিন আসছেন। আমরা তার প্রতি সন্তুষ্ট, সঠিক মীমাংসায় হবে। মুহাম্মদ সাঃ একখানা বিছানার চাদর বিছিয়ে দিলেন। তারপর চাদরে নিজ হাতে পাথরখানা রাখলেন। গোত্র সওদাগরগনকে ডেকে চাদর ধরতে বললেন, তারা ধরে তা যথাস্থানে বহন করে নিয়ে গেল। মুহাম্মদ সাঃ নিজের হাতে পাথরখানা কাবা ঘরের দেয়ালে বসিয়ে দিলেন। একটি অনিবার্য যুদ্ধ থেকে সবাই বেঁচে গেল। পাথর উঠাবার সম্মান পেয়ে সবাই খুশী হলো। বিচার ফয়াসালায় বিচক্ষণতা ও নিরপেক্ষতা অবলম্বন করলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক অনিবার্য সংঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
হযরত খাদিজা রাঃ ব্যবসা এর দায়িত্ব গ্রহণ ও বিবাহ
তখনকার দিনে আরবে একজন বিখ্যাত ধনী ও বিদূষী মহিলা ছিলেন। তার নাম খাদিজা। তিনি তার বিশাল বাণিজ্য দেখাশোনা করার জন্য একজন বিশ্বাসী বিচক্ষণ লোক খুঁজছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সুন্দর চরিত্রের সুনাম শুনে। তিনি তার উপর ব্যবসায়ীর দায়িত্ব অর্পণ করেন। হযরত মোহাম্মদ সাঃ খাদিজার ব্যবসা এর দায়িত্ব নিয়ে সিরিয়া যান। সাথে খাদিজার বিশ্বস্ত কর্মচারী মাইসারাও ছিলেন। ব্যবসায়ের আশাতীত লাভ করে তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। মাইসারার কাছে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সততা, বিচক্ষণতা ও কর্মদক্ষতার কথা শুনে খাদিজা অত্যন্ত মুগ্ধ হন। তিনি তার সাথে নিজের বিয়ের প্রস্তাব দেন। মুহাম্মদ সাঃ এর চাচা আবু তালেব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে খাদিজার বিয়ের সকল ব্যবস্থা করে দেন। শুভ বিবাহ সম্পন্ন হলো। তখন মুহাম্মদ সাঃ এর বয়স ২৫ বছর আর খাদিজার বয়স ৪০ বছর। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়ে ছিল। হযরত খাদিজা বেঁচে থাকতে তিনি অন্য কোন বিয়ে করেননি। বিয়ের পরে খাদিজার আন্তরিকতায় তিনি প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন। কিন্তু তিনি এ ধন সম্পদ ভোগ বিলাসে আরাম-আয়েশে ব্যয় না করে গরিব-দুঃখী ও আর্ত-পীড়িতদের সেবায় অকাতরে ব্যয় করেন।
মুহাম্মদ সাঃ এর নবুওয়াত লাভ
হযরত মুহাম্মদ সাঃ শিশু বয়স থেকেই মানুষের মুক্তির জন্য শান্তির জন্য ভাবতেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার এ ভাবনা আরো গভীর হয়। মূর্তিপূজা ও কুসংস্কার এবং নানা দুঃখকষ্ট জর্জরিত মানুষের মুক্তির জন্য তার সব ভাবনা। মানুষ তার স্রষ্টাকে ভুলে যাবে। হাতে বানানো মূর্তির সামনে মাথা নত করবে এটা হয় না। কি করা যায় কীভাবে মানুষের হৃদয়ে এক আল্লাহর ভাবনা জাগানো যায়। কি করে কুফর, শিরক থেকে তাদের মুক্ত করা যায়। এ সকল বিষয়ের চিন্তা ভাবনায় নিমগ্ন। বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরে নির্জন হেরা পর্বতের গুহায় নির্জনে ধ্যান করতেন। কখনো কখনো একাধারে ৩ দিন সেখানে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধ্যানমগ্ন থাকার পর অবশেষে ৪০ বছর বয়সে রমজান মাসের কদরের রাতে আধার গুহায় আলোকিত হয়ে উঠল। আল্লাহর ফেরেশতা জিব্রাইল আলাইস সাল্লাম আল্লাহর মহান বাণী নিয়ে আসলেন, মহানবী সাঃ কে লক্ষ্য করে বললেন,  ’ইকরা` পড়ুন। তিনি মহানবী সাঃ কে সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত তেলাওয়াত করে শোনালেন,নবীজি ঘরে ফিরে খাদিজার কাছে সব ঘটনা প্রকাশ করলেন এবং বললেন, আমাকে বস্তাবৃত করো। 

আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি। তখন খাদিজা নবীজিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, না কখনো না। আল্লাহর কসম! তিনি কখনোও আপনার অনিষ্ট করবেন না। কারণ আপনি আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করেন। আর্তপীড়িত ও দুঃস্থদের সাহায্য করেন। মেহমানদের সেবা যত্ন করেন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য করেন। হযরত খাদিজার এই উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবুয়ত লাভের আগে মহানবী সাঃ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে মানবিক গুণাবলির অনুশীলন করতেন। মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। বর্বর আরবদের মধ্যে থেকেও তিনি নির্মল ও সুন্দর জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য আদর্শ।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর দ্বীন প্রচার
নবুয়ত লাভের পর হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর নির্দেশে প্রথমে নিকট আত্মীয় স্বজনের কাছে গোপন ঈমানের দাওয়াত দিতে থাকেন। তার দাওয়াতে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করে থাকেন তার সুখ-দুঃখের অংশীদার সতী-সাধ্বী স্ত্রী হযরত খাদিজা রাঃ। এরপর তাদের পরিবারভুক্ত হযরত আলী রাঃ হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন। পরিবারের বাইরে এবং বয়স্ক প্রাপ্তদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হযরত আবু বকর রাঃ। তিনি ছিলেন রাসুল সাঃ এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এরপর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ পেয়ে তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। এতে মূর্তিপূজারী তার ঘোর বিরোধিতা শুরু করে। মহানবী সাঃ ও তার সাহাবীদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে। তারা মহানবী সাঃ কে নানা রকম প্রলোভন দেখাতে থাকে। নেতৃত্ব ও ধন-সম্পদ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। রাসুল সাঃ স্পষ্টভাবে তাদেরকে জানিয়ে দেন, আমার এক হাতে সূর্য আর এক হাতে চাঁদ এনে দিলো। আমি সত্য প্রচার থেকে বিরত হবোনা। তিনি বললেন, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। ইবাদত করতে হবে একমাত্র তাঁরই। তিনি এক অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি আরো বলেন, তোমাদের হাতে বানানো দেবদেবীর ও প্রতিমার কোনো ক্ষমতা নেই। এদের ভালো-মন্দ করার কোনো শক্তি নেই। আসমান, জমিন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা পালনকারী ও রিজিকদাতা। তিনি আমাদের জীবন-মৃত্যুর মালিক। সুতরাং দাসত্ব আনুগত্য ও ইবাদত করতে হবে একমাত্র তারাই। তিনি আরো বললেন, তোমরা সত্য ন্যায় ও সুন্দরের পথে ফিরে এসো চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, জুয়া, ব্যভিচার, মিথ্যা প্রচারণা এসব পাপের কাজ। সুতরাং এগুলো পরিহার করো। কারো প্রতি অন্যায় অবিচার করবেনা। অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করবে না। অন্যায় ভাবে কারো সম্পদ হরণ করবে না। কারো প্রতি জুলুম করবে না।

মহানবী সাঃ আরো বোঝালেন, তোমাদের দুনিয়ার জীবনের শেষ নয়। মৃত্যুর পরে আরও এক জীবন আছে, তুমি তাকে বলে পরকাল। আর যে জীবন অনন্তকালের। পরকালে আল্লাহর দরবারে দুনিয়ার ভালো মন্দ সব কাজের জন্য হিসাব দিতে হবে। দুনিয়ার জীবনে যারা আল্লাহ ও রাসূলের কথা মানবে, ভালো কাজ করবে, পরকালে তারা মুক্তি পাবে। চির সুখের স্থান জান্নাত লাভ করবেন। আর যারা আল্লাহ ও রাসুলের কথা মানবে না, মন্দ কাজ করবে, তারা চরম শাস্তির স্থান জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ  ইসলাম প্রচারে তায়েফ গমন
নবুয়তের দশম বছরে মহানবী সাঃ এর প্রিয়তমা সহধর্মিনী হযরত খাদিজা রাঃ ও তার চাচা আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। এতে তিনি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। সীমাহীন সুখ ও কাফেরদের অত্যাচারের মুখেও তিনি দীন প্রচার করতে থাকেন। তিনি মক্কাবাসীদের থেকে একরকম নিরশ হয়ে দ্বীন প্রচারের জন্য তায়েফ গমন করেন। সেখানকার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করলই না বরং তারা প্রস্তরাঘাতে মহানবী সাঃ এর পবিত্র শরীর ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত করে ছাড়লো। মহানবী সাঃ এমনসময় তায়েফ বাসীদের জন্য বদ দোয়া করলেন না। বরং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন। ইতিহাসে এমন ক্ষমার দৃষ্টান্ত বিরল।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ মেরাজে গমন

হযরত মুহাম্মদ সা এর মদিনা হিজরত
৬২১ খ্রিস্টাব্দে হজের মৌসুমে মদিনা থেকে ১২ জন লোকের একটি দল মক্কায় আসেন এবং গোপনে মহানবী সাঃ এর সাথে সাক্ষাত করে ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে মদিনা থেকে দুজন মহিলা সহ ৭৫ জনের একটি দল এবং আকাবায় মহানবী সাঃ এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা মহানবী সাঃ ও সাহাবীদের মদিনায় হিজরতের আহ্বান জানান এবং সবরকম সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। মক্কার কাফেরদের বিরোধিতা ও নির্যাতনের মাত্রা যখন বেড়ে গেল এবং ইসলাম প্রচার বাধাগ্রস্ত হলো তখন মহানবী সাঃ সাহাবীগণকে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দিলেন এবং নিজে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় রইলেন।
আল্লাহর উপর মহানবী সাঃ এর গভীরতা আস্থা ও অটল বিশ্বাস
কাফেররা দেখল যে, মুসলমানরা মক্কা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে নবী করিম সাহ হয়তো এক ফাঁকে দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। তাদের শিকার হাতছাড়া হয়ে যাবে। সকল গোত্র সম্মিলিতভাবে হযরত মুহাম্মদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিল। একরাতে তারা নবী করিম সাঃ এর ঘর অবরোধ করল এবং তাকে হত্যা করার অপেক্ষায় থাকলো। আল্লাহ তাআলা নবীকে কাফেরদের চক্রান্তের কথা জানিয়ে দিলেন এবং মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দিলেন। হিজরত অর্থ দেশত্যাগ। মহানবী সাঃ হযরত আবু বকর রাঃ কে সঙ্গে নিয়ে মদিনায় রওনা হলেন। গচ্ছিত সম্পদ মালিকদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মহানবী হযরত আলী রাঃ কে তার ঘরে রেখে যান। কাফেররা ঘরে ঢুকে নবীকে না পেয়ে এবং তার বিছানায় আলীকে দেখতে পেয়ে ক্রোধে অধীর হলেন। কিন্তু নবী করিম সাঃ এর আমানতদারী দেখে তারা মনে মনে লজ্জিত হল। মহানবী সাঃ ও আবু বক্কর সিদ্দিক কিছুদূর অগ্রসর হয়ে মক্কার সাওর পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিলেন। কাফেররা তাদের খুঁজিতে খুঁজিতে একেবারে গুহার মুখে হাজির হল। হযরত আবু বকর রাঃ গুহার মুখে কাফেরদের গতিবিধি লক্ষ্য করে বিচলিত হলেন। মহানবী সাঃ বললেন, আবুবক্কর চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনদিন গুহায় অবস্থানের পর মহানবী সাঃ ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর মদিনায় পৌঁছান। মদিনার লোকেরা পরম আগ্রহ ভালোবাসায় মহানবী সাঃ কে গ্রহণ করলেন। মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ এর বন্যা বয়ে গেল। নবীজির হিজরত ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যমে ইসলাম নতুন নতুন শক্তি লাভ করে। মহানবী সাঃ মুজাহিদ ও আনসারদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করেন। মোহাজির মানে হিজরতকারী। মক্কা থেকে হিজরত করে যারা মদিনায় যান, তাদেরকে বলা হয় মুহাজির। আর মুহাজিরদের মদিনায় যারা আশ্রয় ও সাহায্য-সহযোগিতা দিলেন, তারা হলেন আনসার। আনসার মানে সাহায্যকারী।

মদীনার সনদ
মহানবী সাঃ মদিনায় হিজরত করে একটি আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলেন। এখানে মুহাজির আনসারসহ সকল মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মালম্বী ইহুদি খ্রিস্টান ও অন্যান্য মতাদর্শের লোক একত্রে মিলেমিশে সুখে-শান্তিতে নিরাপদে বাস করবে। তাদের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি বজায় থাকবে এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মকর্ম পালন করতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে মদিনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করেন। এটি মদিনা সনদ নামে খ্যাত এবং এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সনদ। এই সনদে ৪৭ ধারা ছিল। যেমনঃ-
১. সকল সম্প্রদায় স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। ধর্মীয় ব্যাপারে কেউ কারও উপর হস্তক্ষেপ করবে না।
২. সনদে স্বাক্ষরকারী সকল সম্প্রদায় কে নিয়ে একটি সাধারণ জাতি গঠিত হবে এবং সকলে সমান নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে।
৩. কেউ অপরাধ করলে তা তার ব্যক্তিগত অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। সেজন্য গোত্র বা সম্প্রদায় দায়ী হবে না।
৪. হত্যা, রক্তারক্তি, ব্যভিচার ইত্যাদি পাপ কর্ম নিষিদ্ধ করা হলো। মদিনা শহরকে পবিত্র বলে ঘোষণা করা হলো।
৫. হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পূর্ব অনুমতি ব্যতীত কেউ কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
৬. সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে মহানবী সাঃ তা মীমাংসা করে দিবেন। ইত্যাদি
মদিনার সনদ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কূটনৈতিক, দূরদর্শিতা, ধর্মীয় সহিংসতা এবং সুন্দর সমাজ গঠনের এক জ্বলন্ত স্বাক্ষর বহন করে। এতে বিভিন্ন জাতের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও আর্থসামাজিক অধিকার নিশ্চিত হয়।

বদর ও অন্যান্য যুদ্ধ
মক্কার কাফের মুশরিকরা চেয়েছিল ইসলাম ও মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে। মদিনা ইসলামিক উত্তরোত্তর উন্নতি দেখে তারা হিংসায় জ্বলে ওঠেন। মদিনার ইহুদীরা তাদের প্ররোচিত করেছিল। আবার আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য কাফেলা মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার গুজব উঠেছিল।  কাফেররা মদিনা আক্রমণের জন্য রওয়ানা হল। সংবাদ পেয়ে রাসূল সাঃ ৩১৩ জন সাহাবী মদিনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর নামক স্থানে উপস্থিত হন। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদর প্রান্তর দুইপক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হলা। কোরাইশ বাহিনীর সংখ্যা এক হাজার। অস্ত্রশস্ত্র বেশুমার। মুসলিমদের সংখ্যা নগন্য। অস্ত্রশস্ত্র তেমন কিছু নেই। কিন্তু তারা ঈমানের বলে বলিয়ান ও তাদের আল্লাহর উপর অকৃত্রিম বিশ্বাস ও ভরসা। তুমুল যুদ্ধ হলো মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হল। বদর যুদ্ধে নেতা আবু জাহেল, ওলিদ, উতবা ও সায়বা সহ ৭০ জন মারা যায় এবং ৭০ জন বন্দী হয়। মুসলিম পক্ষে ১৪ জন শহীদ হন। কেউ বন্দী হন নি। রাসুল সাঃ ও মুসলিমগণ যুদ্ধবন্দীদের সাথে উদার ও মানবিক আচরণ করেছিলেন। নিজেরা না খেয়ে বন্দীদের খাওয়াতেন। নিজেরা পায়ে হেঁটে বন্দীদের বাহনের ব্যবস্থা করতেন। বন্দী মুক্তির চমৎকার ব্যবস্থা করেছিলেন। শিক্ষিত বন্দীদের মুক্তিপান নির্ধারিত করা হয়েছিল ১০ জন করে নিরক্ষর মুসলিম বালক-বালিকাদের শিক্ষিত করা। এটি শিক্ষা বিস্তারে রাসুল সাঃ এর প্রচেষ্টার অংশ। ইসলামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। স্বল্পসংখ্যক মুসলিম বাহিনীর হাতে কাফেরদের বিরাট বাহিনী পরাজিত হয়। এতে কাফেরদের মনে বিতির সঞ্চার হয়। বদর যুদ্ধের শোচনীয় পরাজয়ের পরেও কাফেররা দমে গেল না। তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে বারবার আক্রমণ চালাতে লাগল। এর মধ্যে উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ। এসব যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় হলেও উহুদ যুদ্ধে সামান্য ভুলের জন্য মুসলমানদের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ৭০ জন সাহাবা শাহাদাত বরণ করেন। মহানবী সাঃ এর পবিত্র দাঁত মুবারক ভেঙ্গে যায়।
হুদায়বিয়ার সন্ধি
হিজরী ৬ সনে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে রাসুল সাঃ ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে ১৪০০ জন সাহাবী সহ মক্কা যাত্রা করেন এবং মক্কার নয় মাইল দূরে হুদাইবিয়া নামক স্থানে উপনীত হন। কুরাইশরা ওমরা পালনে বাধা দেয়। রাসুল সাঃ জানালেন, আমরা যুদ্ধের জন্য আসেনি। শুধু ওমরা করে চলে যাব। কিন্তু কোরাইশরা তাতেও রাজি হলো না। রাসুল সাঃ মক্কাবাসীদের কাছে ওসমান রাঃ কে দূত হিসেবে পাঠান। তাঁর ফিরে আসতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি শহীদ হয়েছেন বলে রব ওঠে। রাসুল সাঃ মুসলমানদের থেকে এই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নেন। কাফের ভীত হয়ে  উসমান রাঃ কে ফেরত দেয় এবং সুহাইল আমরকে সন্ধির প্রস্তাব পাঠায়। ১০ বছরের জন্য সন্ধি হয়। এটি হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে খ্যাত। সন্ধির শর্ত গুলোর মধ্যে অন্যতম শর্ত ছিলঃ-
১. মুসলমানগন এবছর ওমরা না করে ফিরে যাবেন। আগামী বছর নিরস্রভাবে তিনদিনের জন্য আসবেন।
২. কোন মক্কাবাসী মদিনায় আশ্রয় নিলে তাকে মক্কায় ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। কিন্তু কেউ মদিনা থেকে মক্কায় আসলে তাকে ফেরত দেওয়া হবে না। আরবের যে কোন গোত্র দুই পক্ষের যে কারো সাথে মিত্রতা করতে পারবে। ইত্যাদি আপাতত দৃষ্টিতে এই সন্ধির শর্ত গুলো মুসলমানদের জন্য অপমানজনক মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সুফল বয়ে এনেছিল। এতে  কাফেররা মুসলমানদের একটি শক্তিধর স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে মেনে নেয়। দেশ-বিদেশে ইসলাম প্রচারের সুযোগ হয়। দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহন করতে থাকে। একে কোরআনে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয়েছে।

মক্কা বিজয়
কুরাইশরা তাদের মিত্র বনু বকর হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে মুসলমানদের মিত্র খুজআ গোত্রকে আক্রমণ করেন। তাদের মালামাল লুট করে এবং অনেকে আহত ও নিহত করেন। রাসুল সাঃ এর শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ না করে তারা সন্ধি বাতিল করেন। অষ্টম হিজরীর রমজান মাসে মহানবী সাঃ দশহাজার সাহাবী নিয়ে মক্কা বিজয়ের জন্য যাত্রা করেন। হঠাৎ এত বড় মুসলিম বাহিনী দেখে অপরা ভয় পেয়ে গেল অবস্থা বেগতিক দেখে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান মহানবী সাঃ কে স্বাগত জানায়। মহানবী সাঃ প্রায় বিনা বাধায় একেবারে বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করেন।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ মক্কাবাসীদেরকে ক্ষমা
যে মক্কাবাসী একদিন মহানবী সাঃ ও মুসলমানদের নির্মম নির্যাতন করেছিল। মহানবী সাঃ কে হত্যা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। যাকে জন্মভূমি মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। মদিনাতে ও তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। সেই মক্কায় তিনি বিজয়ীর বেশে হাজির হন। তিনি এখন মক্কার একচ্ছত্র অধিপতি আর মক্কাবাসী তার সামনে অপরাধের বেশে দন্ডায়মান। মহানবী সাঃ জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আমার কাছে কেমন ব্যবহার প্রত্যাশা করছ? তারা বলল, আজ আপনি আমাদের যে কোনো শাস্তি দিতে পারেন, তবে আপনি তো আমাদের দয়ালু ভাই ও দয়ালু ভাইয়ের পুত্র। আপনার কাছে আমরা দয়া পূর্ণ ব্যবহার প্রত্যাশা করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ তোমাদের বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। যাও তোমরা মুক্ত-স্বাধীন। মহানবী সাঃ সবাইকে ক্ষমা করেছিলেন। নেতা আবু সুফিয়ানকে ক্ষমা করেছিলেন। এই আবু সুফিয়ান উহুদ যুদ্ধে কাফেরদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এতে মহানবী সাঃ এর দাঁত শহীদ হয়েছিল। আর তাঁর প্রিয় চাচা হযরত হানজালা  রাঃ শহীদ হয়েছিলেন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার কলিজা চর্বন করেছিল। তিনি তাকেও ক্ষমা করেছিলেন। ক্ষমার এ এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।
হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বিদায় হজ
মহানবী সাঃ দশন হিজরীতে হজ পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এটা ছিল তার জীবনের শেষ হজ। তিনি এরপর আর হজ করার সুযোগ পাননি, তাই একে বিদায় হজ বলা হয়। মহানবী সাঃ লক্ষাধিক সাহাবী নিয়ে হজ্ব আদায় করেন। আরাফার ময়দানে জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে এক মর্মস্পর্শী ভাষণ দেন, এটি ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত। এই বাসনা মহানবী সাঃ সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন। যেমনঃ-
১. সকল মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই।
২. আজকের এ দিন, এ স্থান, এ মাস যেমন পবিত্র তেমনি তোমাদের পরস্পরের জানমাল ও ইজ্জত পরস্পরের নিকট পবিত্র।
৩. অধীনস্থদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তোমরা যা খাবে তাদেরও তার খাওয়াবে। তোমরা যা পরবে তাদেরও তাই পরাবে।
৪. একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দিবে না।
৫. ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সর্বপ্রকার সুদ হারাম করা হলো। সকল সুদের পাওনা বাতিল করা হলো।
৬. নারীর ওপর পুরুষের যেমন অধিকার আছে। তেমনিভাবে পুরুষের উপর নারীর অধিকার আছে। জাহিলি যুগের সকল কুসংস্কার ও হত্যার প্রতিশোধ বাতিল করা হলো আমানতের খেয়ানত করবে না গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকবে মনে রাখবে একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে এবং তার কাছে জবাবদিহি করতে হবে আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী আল কোরআন এবং তাঁর রাসূলের আদর্শ হাদিস রেখে যাচ্ছি তোমরা এই দুইটি যতদিন আঁকড়ে ধরবে কতদিন তোমরা বিপথগামী হবে না তিনি আরও অনেক মূল্যবান কথা বললেন এরপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন হে আল্লাহ তোমার বাণীকে আমি যথাযথভাবে মানুষের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি উপস্থিত লক্ষ জনতা সমস্বরে জবাব দিলেন হ্যাঁ নিশ্চয়ই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো এরপর সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলা জিবরাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রেরণ করে বলেন,
ٱلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلْإِسْلَٰمَ دِينًا فَمَنِ ٱضْطُرَّ فِى مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِّإِثْمٍ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অনুবাদঃ-  আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল। (সুরা মায়েদা,  আয়াত :৩)

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ইন্তেকাল
বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পর মহানবী সাঃ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে হিজরী একাদশ সালের ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল সাঃ দুনিয়ার থেতে পর্দা করেন। মদিনা শরীফ মসজিদে নববীর একপাশে উনাকে রওজায় দেওয়া হয়। বিশ্বের মুসলমানগন ভক্তিভরে নবীর রওজা জিয়ারত করেন।






1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post